বাংলাদেশের জনগণ কারো প্রভুত্ব স্বীকার করবে না, বললেন মির্জা ফখরুল

‘বাংলাদেশের জনগণ কারো প্রভুত্ব স্বীকার করবে না’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘‘কোনো দেশ যদি মনে করে, বাংলাদেশের মানুষের ওপরে প্রভুত্ব করবে- সেটা কোনোদিন হবে না। মোঘল আমলে পারেনি, বৃটিশ পারেনি, পাকিস্তানও পারেনি, এখনো পারবে না। প্রয়াত গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের একটা চমৎকার গান আছে- ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে নয়’। রক্তের দাম দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। কারো দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই।’’

সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি প্রতিবেশী দেশকে ইঙ্গিত করে এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ হয়।

নয়া পল্টনের কার্যালয়ের ফুটপাতের একপাশে সড়কে এই সমাবেশ হয় ছোট পরিসরে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর সাড়ে তিন মাস পর মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান বিএনপি মহাসচিব। এরপর গত শনিবার দেশে ফিরে এটি তার প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান।

তরুণ সমাজকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে এ দিন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা অনেক বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। এরপরও তারা এখনো লড়ছেন, কথা বলছেন, লড়ে যাচ্ছেন। তারা বিশ্বাস করেন, এই দেশকে পরাধীন করে রাখার ক্ষমতা কারো নেই। তারা বিশ্বাস করেন- এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী একটা রেজিম, একটা শাসকগোষ্ঠি যারা আজকে জোর করে, কলা-কৌশল করে, বিভিন্ন নাটক করে ক্ষমতা দখল করে আছে তাদেরকে একদিন চলে যেতেই হবে। আর সেজন্য মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নামতে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে না নামলে জয়ী হতে পারবেন না। শ্রমিকদের মাঠে নামতে হবে, ছাত্রদের মাঠে নামতে হবে। সমস্ত জায়গা থেকে যখন মানুষ উঠে আসবে সেইদিন হবে সত্যিকার অর্থেই সফল গণঅভ্যুত্থান, সফল বিস্ফোরণ, বিজয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাগুলোতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে ছাত্র দলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা ছাত্রীদেরকে শ্লীলতাহানি করছেন। আপনারা কি করেছেন? উত্তর দিতে পারবেন না? একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেন নাই। এই মহিলা দল প্রতিবাদ করে নাই। কোথায় গেল সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোথায় গেল ছাত্ররা- যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন করেছে, ’৬৯ এর আন্দোলন করেছে, ৯০ এর আন্দোলন করেছে। কোথায় গেছে তারা?’

তিনি আরও বলেন, আজকে ছাত্র দলের নেতারা এখানে যারা আছেন এভাবে শুধু স্লোগান দিলে হবে না, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। পদাতিক বাহিনী যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে যুদ্ধ কে করবে? ছাত্রদলকে শক্তিশালী করতে হবে। যারা একটা পুলিশের হুইসেল শুনলে দৌঁড়াবে না, যারা একটা সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শুনলে পালাবে না, যারা রাস্তায় প্রাণ দেবে, দাঁড়িয়ে থাকবে- এই ধরনের মানুষগুলো তৈরি করতে হবে, বুকে সেই সাহস নিয়ে দাঁড়াতে হবে।

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দ্যেশ্যে ফখরুল বলেন, ‘পাকিস্তানের ইমরান খানের দিকে তাকান। পাকিস্তান নাম বললে সবাই আতকে উঠি, অন্যভাবে চিন্তা করি। সেখানে ইমরান খান দেখিয়ে দিয়েছেন- কীভাবে তরুণদেরকে মাঠে নিয়ে আসতে হয়, কীভাবে মহিলাদেরকে মাঠে আনতে হয়।’

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এই দিনে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ চেষ্টা করেছে পাকিস্তানের সঙ্গে একটা দফা-রফা করার জন্য। যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখন তারা কেউ দেশে থাকেননি, পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আর মূল নেতা আত্মসমপর্ণ করে পাকিস্তান চলে গেছেন। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই উজ্জীবন। সমস্ত মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধ করেছিলো বলেই ১৯৭১ সালে আমরা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি।’

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের চরম অবস্থা। দেশের যুব সমাজ, তরুন সমাজকে বলব, আজকে মোবাইল রাখেন, ল্যাপটপ রাখেন। আজকে দেশ আপনাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছে, দেশের ডাকে, জনগণের ডাকে আপনাদের মা-বোনের ইজ্জত রক্ষায় রাজপথে নেমে আসুন।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »